বেফাকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে হাসাহাসি, সহসভাপতি বলছেন এতে সমালোচনার কিছু নেই

সুফিয়ান ফারাবী

নুর নিউজ

বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর সবচেয়ে বড় শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্প্রতি তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। হিসাবরক্ষক বিভাগের পরিচালক, হিসাব রক্ষক এবং সহকারী হিসাব রক্ষক, এই তিনটি পদে তৃতীয়, পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডে বেতন দেওয়া হবে। ‌

হিসাব বিভাগে পরিচালক পদের জন্য সর্বনিম্ন হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ও পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা। হিসাবরক্ষক পদে যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে, বানিজ্য বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং সর্বনিম্ন তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা। অন্যদিকে ষষ্ঠ গ্রেডে বেতন পাওয়া সহকারী হিসাব রক্ষকের জন্য চাওয়া হয়েছে একই বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক। তবে এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন মাত্র দু’বছরের।

মজার বিষয় হলো, সবকটি পদে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি পাবেন এই যোগ্যতার পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসার ডিগ্রিধারীরা। অর্থাদ, চাকরির ক্ষেত্রে বেফাক তাদেরকেই চাচ্ছে, যারা কওমি মাদরাসার শিক্ষা বন্ধ রেখে আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করেছেন অথবা কওমি ও আলিয়া বা স্কুল, উভয় ধারার শিক্ষা গ্রহণ করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অমান্য করে।

গত দুদিন পূর্বে বেফাকের ফেসবুক কর্তৃক সত্যায়িত পাতা থেকে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

অধিকাংশ নেটিজেন বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে বেফাক কর্তৃপক্ষের কঠোর সমালোচনা করেছেন। অনেকে আবার হাস্যরসে মেতেছেন শিক্ষাবোর্ডের এমন কর্মকাণ্ডে।

“বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফতি এনায়েতুল্লাহ লিখেছেন, মাওলানা সাহেবান!

যেহেতু আপনার সিলেবাসে ‘হিসাব বিজ্ঞান’ নেই, কিন্তু হিসাব বিজ্ঞানের লোকের প্রয়োজন- সুতরাং এখন থেকে ‘হিসাব বিজ্ঞান’ পড়ানোর ব্যবস্থা নেন এবং হিসাব বিজ্ঞানে পড়ালেখাকারীদের গালি দেওন বন্ধ করেন।” মুফতি এনায়েতুল্লাহ ফেসবুক পোস্টের হুবহু।

তার এই পোস্টে শত শত মন্তব্য জমা পড়ে। যার অধিকাংশই নেতিবাচক বা বেফাক কর্তৃপক্ষের কাছে সিলেবাস সংশোধনের আবেদনমুলক।

বেফাকের এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কঠোর সমালোচনা যারা করেছেন তাদের আরেকজন মুফতি সুলতান মাহমুদ। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া বলিয়ারপুরে সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত।

No description available.

তার এই পোস্টের মাজেজা বা মর্মকথা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যখন শিক্ষারত তখন আলিয়ায় পড়াশোনা এতটাই নিন্দনীয় ছিল, অভিযুক্ত ছাত্রকে ১ হাজার বার তওবা করতে বলা হত। আমাদের মধ্যে অনেক মেধাবী ঝরে পড়ে ছিলেন এই “অপরাধে” জড়িত থাকার কারণে।আমারও ইচ্ছে ছিল ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষা লাভ করার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কঠোরতা এবং অভিযুক্তদের শাস্তি দেখে আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়েছিলাম। তখন এটাকে নাজায়েজ মনে করা হতো। এজন্যই মনের কষ্টে লিখেছিলাম, সময়ের প্রয়োজনে সবকিছুই জায়েজ হয়।

এদিকে বেফাকের কর্তা ব্যক্তিরা বলছেন এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে হাসাহাসি বা সমালোচনার তেমন কিছু দেখেন না তারা।

বেফাকের সহ-সভাপতি ও গহরপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু নুর নিউজকে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার কিছু দেখছিনা। আমাদের কওমি মাদ্রাসাগুলোর কাজ হল ধর্মীয় পণ্ডিত তৈরি করা। তারা ধর্মীয় অঙ্গনে পারদর্শী। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য কেউ কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হয় না। আমরা ধর্মীয় মৌলিক শিক্ষাই দিয়ে যেতে চাই।

“বেফাক অফিসে যারা কর্মরত আছেন তাদের অধিকাংশই কওমি মাদ্রাসা পড়ুয়া। ক্ষুদ্র সংখ্যক জেনারেল শিক্ষিত মানুষ কাজ করছেন ভিন্ন ভিন্ন সেক্টরে। হিসাববিজ্ঞানের জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিকেই আমাদের বেছে নিতে হবে।” বলছিলেন মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু।

সিলেবাস পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সিলেবাস যথেষ্ট সমৃদ্ধ। আপাতত অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত জেনারেল সাবজেক্টগুলো আমাদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত। আমাদের মাদ্রাসা গুলো থেকে পড়াশোনা করে আলিয়া অথবা স্কুল লাইনে গিয়ে বেশ ভালো ফলাফল করছে ছাত্ররা। আমি মনে করি এটা আমাদের সিলেবাসের কারণেই তাদের এই সফলতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কওমি মাদ্রাসায় পড়ুয়া আলিয়ার শিক্ষার্থীরা সাফল্যের সাথে প্রতিবছর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। তাই আমি মনে করি আমাদের সিলেবাস যথেষ্ট সমৃদ্ধ। আরও সমৃদ্ধ করতে আগামীতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত জেনারেল সাবজেক্টগুলো রাখার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।

নুর নিউজের পক্ষ থেকে আরও একই প্রশ্ন করা হয় বেফাকের সহ সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজুকে।

“আপনাদের মাদ্রাসাগুলো থেকে যারা আলিয়া কিংবা স্কুলে গিয়ে জেনারেল সাবজেক্টগুলো পড়াশোনা করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদেরকে আপনারা উল্লেখিত তিনটি পদে অগ্রাধিকার দিবেন বলেছেন। অথচ প্রতিবছর শত শত ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয় আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার অপরাধে। বিষয়টি কি সাংঘর্ষিক নয়? যাদেরকে আপনারা বহিষ্কার করছেন, তাদেরকেই চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে যাচ্ছেন! ভিন্নভাবে বললে, বহিস্কৃত ছাত্ররাই আপনাদের এই তিনটি পদে অগ্রাধিকার পাবে।”

মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু এই প্রশ্নের জবাব এভাবে দিয়েছেন, “এটি কোন মাদ্রাসা কিংবা শিক্ষকের চিন্তা-ধারা অথবা মানসিকতা হতে পারে। বেফাক এই মানসিকতা লালন করে না।

চিন্তাশীল আলেমরা বলছেন অনতিবিলম্বে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস পরিবর্তন আনা দরকার। ইসলামিক সাবজেক্ট গুলোর পাশাপাশি জেনারেল বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করার শর্তে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। অন্যথায় পিছিয়ে জাতি হিসেবে বিবেচ্য হবে বিশাল জনগোষ্ঠীর এসব শিক্ষার্থীরা।

 

এ জাতীয় আরো সংবাদ

কাতারে ‘বাংলাদেশে ইসলাম আগমনের ইতিহাস’- শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

নূর নিউজ

কুড়িগ্রাম জেলা কওমী ওলামা পরিষদের খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত 

নূর নিউজ

চরমোনাই পীরকে বাহাসের চ্যালেঞ্জ!

নূর নিউজ