ভাষা আল্লাহর দেয়া এক অফুরন্ত নেয়ামত: মাওলানা রাব্বানী

ভাষা আল্লাহর দেয়া এক অফুরন্ত নেয়ামত। আল্লাহর মহিমার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। আল্লাহর ভাষায় ‘আসমান ও জমিনের সৃষ্টি, ভাষা ও রঙের ভিন্নতা তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম। জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে এর জন্য বহু নিদর্শন। (সূরা আর রুম-২২)

মাতৃভাষা বা মায়ের ভাষা। ইসলাম মায়ের প্রতি যেমন অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দিয়েছে, তেমনি মাতৃভাষার প্রতিও অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে।

মহান আল্লাহ সব নবী-রাসূলকে স্ব-জাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছেন। যাতে তারা স্বীয় জাতিকে দ্বীনের দাওয়াত স্পষ্টভাবে পৌঁছাতে পারেন।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে–আমি রাসূলগণকে তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তাদের (দ্বীন) স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন। -সূরা ইবরাহিম: ৪

মানুষের মাঝে আল্লার বাণী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব রাসূলদের। তারা তাদের লোকদের কাছে তাদের বোধগম্য ভাষায় আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়েছেন। কেউ শুনেছে ও সেভাবে আমল করেছে, আবার অনেকে অমান্য করেছে অবাধ্য হয়েছে। কিন্তু নবী-রাসূলরা তাদের কাছে ভাষা নির্দেশ পৌঁছানো পর্যন্ত তারা মুক্ত। তাই ভাষা শুধু অর্থজ্ঞাপক কতিপয় বাক্যসমষ্টিই নয়; বরং উপলব্ধি, বক্তব্য, আদেশ, নিষেধ ইত্যাদি প্রকাশের মাধ্যম ও বাহন। রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহ মাতৃভাষাকে অপরিহার্য করেছেন। মৌলিকভাবে আল্লাহর বাণী সর্বকালের, সব স্থানের ও সব মানুষের জন্য এক ও অভিন্ন। তার কালাম পবিত্র ও স্থায়ী।

আল্লাহতায়ালা দাউদ (আ.) কে জাবুর কিতাব দিয়েছিলেন। যেহেতু তার লোকেরা ইউনানি ভাষায় কথা বলত তাই তার প্রতি নাজিলকৃত কিতাব ইউনানি ভাষায় ছিল। মূসা (আ.) কে ইসরাইলদের ভাষায় হিব্রুতে তাওরাত দেয়া হয়েছিল।

ঈসা (আ.) কে সুরিয়ানি ভাষায় ইঞ্জিল দেয়া হয়েছিল। আরবি ভাষাভাষীদের মধ্যে প্রেরিত হন মুহাম্মদ (সা.)। তাই তাকে আল কোরআন আরবি ভাষায় দেয়া হয়। যদিও তিনি সর্বকালের ও সর্বস্তরের জন্য, তবুও তার মাতৃভাষায় আল্লাহর কালাম এ জন্য নাজিল করা হয় যাতে তিনি তার সমকালীন লোকদের তাদের বোধগম্য ভাষায় আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিতে পারেন।

আরবি ভাষাভাষীদের কাছে মহাগ্রন্থ কোরআনকে রাসূল (সা.) অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ ও প্রচার করেন। যখন অনারবদের কাছে সাহাবায়ে কেরাম কোরআন নিয়ে উপস্থিত হন তখন তারা স্থানীয় লোকদের ভাষায় কোরআনের মর্ম পেশ করেন। কেননা কোরআন অনুসরণের জন্য যদি কেউ না বোঝে, তার পক্ষে অনুসরণ সম্ভব নয়।

প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি আরবদের মধ্যে সবচে’ বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জলভাষী। ’ রাসূলের এ বাণী থেকে প্রমানিত হয়; বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল মাতৃভাষায় কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করা রাসূল (সা.)-এর আদর্শ।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি আমাদের ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। মরিয়া হয়ে উঠেছিল উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে। তাদের এই অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে বাংলাভাষাভাষীরা গড়ে তুলেন তীব্র আন্দোলন। কিন্তু বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেন রাজপথ। এই দূর্বার আন্দোলনে শামিল হয়ে মায়ের ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করেন এদেশের বহু ছাত্র-জনতা।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সংগ্রামরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন বরকত, সালাম, জব্বার, শফিক ও রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেক বীর সন্তানেরা। এভাবে মাতৃভাষার জন্য রক্তদান বা শাহাদত বরণের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার দীপ্ত শপথে উৎসর্গকৃত তাজা রক্তের বদৌলতে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি লাভ করে এবং রক্তে রঞ্জিত ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় ভূষিত হয়। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা সৃষ্টিতে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনই প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। ভাষা আন্দোলনের এই গৌরবোজ্জ্বল রক্তিম ইতিহাস জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে যুগ থেকে যুগান্তরে এটি আমাদের প্রত্যাশা।

মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী
খতীব, ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদ, গুলিস্তান, ঢাকা

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আর্মি ফার্মা লিমিটেডের যাত্রা শুরু

আনসারুল হক

৪৭ বছর একই মসজিদে ইমামতির পর মৃত্যুবরণ করলেন মাওলানা সায়াদাত আলী

নূর নিউজ

কুরবানীর ছুরি নয়, দলীয় ক্যাডারদের হাতে থাকা অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারে মনোযোগ দিন: খেলাফত আন্দোলন

আলাউদ্দিন