মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেভাবে পাপের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে

জেনে বুঝে, নিজের অজান্তে প্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষ জীবনে অসংখ্য পাপ করে। পরকালের শান্তি এবং দুনিয়ার জীবনের ক্ষতির আশঙ্কার কথা অনেকেই ভুলে যান। মানুষ সাধারণত গোপনেই পাপ করে থাকে। এ সময় কেউ তাকে দেখছে না, এ পাপের কোনও প্রমাণ নেই এমন ধারণাই থাকে মানুষের। অথচ মানুষ পাপ যত গোপনেই করুক না কেন, আল্লাহ তায়ালা তার হিসাব নেবেন এবং পরকালে বিচার দিবসে তা প্রকাশ করে দেবেন।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘যেদিন তাদের জিহ্বা, হাত ও পা তাদের কৃতকর্মের কথা প্রকাশ করে দেবে। সেদিন আল্লাহ তাদের প্রাপ্য প্রতিফল পুরোপুরি দেবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই সত্য, স্পষ্ট প্রকাশক। (সূরা নূর, আয়াত, ২৪-২৫)

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে শুধুমাত্র মুখ মানুষের গুনাহের সাক্ষ্য দেবে না, সেই সঙ্গে আল্লাহর অনুমতি নিয়ে প্রত্যেক অপরাধীর অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও দুনিয়ায় তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে কথা বলতে থাকবে। তখন অপরাধীদের মনে হবে, তাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ তাদের কৃতকর্মকে রেকর্ড করে রেখেছিল- যা এখন আল্লাহর নির্দেশে ফাঁস করে দিচ্ছে।

মানুষের শরীরের সাক্ষ্য ও ভাষ্য অনুযায়ী সেদিন সঠিকভাবে প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা হবে। এই বিচার করতে গিয়ে আল্লাহ মানুষের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ অন্যায় আচরণ করবেন না। তখন অপরাধীরা তাদের ভুল বুঝতে পারবে, তারা বুঝতে পারবে ভুল করে কতই না গোনাহ করেছে। যদিও সেদিন এ উপলব্ধি তাদের কোনো কাজে আসবে না।

সুতরাং দুনিয়ায় কিছু করার আগে মানুষের মনে কিয়ামতের দিনের কথা মনে রাখা দরকার। ওইদিন মানুষ নিজের হাতে আমলনামা দেখে এবং পাল্লা দিয়ে ওজন করার পরও অনেকে কৃতকর্ম অস্বীকার করে বসবে। তারা বলতে থাকবে- আমরা এই এই কাজ করিনি। ফেরশতারা কমবেশি বা ভুল করে লিখে রেখেছে। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের মুখ বন্ধ করে দেবেন। তাদের ইচ্ছাধীন বাকশক্তির বদলে তাদের জিহ্বা, হাত এবং পা’কে কথা বলার শক্তি দিবেন। তখন জিহ্বা তার কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, হে আল্লাহ! সে আমার দ্বারা অমুককে গালি দিয়েছে, এই এই মিথ্যা বলেছে। এমনিভাবে হাত সাক্ষ্য দেবে- সে আমার দ্বারা অন্যায়ভাবে অমুকে প্রহার করেছে, আমার দ্বারা এই খারাপ কাজ করেছে। পা সাক্ষ্য দেবে- এ আমার দ্বারা এই এই খারাপ কাজ করেছে। এটাই কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে।

হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বসে ছিলাম। হঠাৎ তিনি হেসে উঠলেন এবং বললেন, তোমরা কি জানো, আমি কেন হেসে উঠেছি?

আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূল সব থেকে ভালো জানেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সেই কথা স্মরণ করে হেসেছি যখন হাশরের ময়দানে বান্দা আল্লাহ তায়ালাকে বলবে, হে পরওয়ারদেগার, আপনি কি আমাকে জুলুম থেকে আশ্রয় দেননি? আল্লাহ বলবেন, অবশ্যই দিয়েছি। তখন বান্দা বলবে, আমি আমার হিসাব নিকাশের ব্যাপারে অন্য কারো সাক্ষ্যে সন্তুষ্ট নই। আমার অস্তিত্বের মধ্য থেকেই কোনও সাক্ষী না দাঁড়ালে আমি সন্তুষ্ট হবো না।

আল্লাহ তায়ালা তখন বলবেন, তুমি নিজেই তোমার হিসাব করে নাও। এরপর তার মুখে মোহর এঁটে দেওয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলা হবে তোমার তার কাজকর্মের বর্ণনা কর। এতে প্রত্যেক অঙ্গ কথা বলা শুরু করবে এবং সত্য সাক্ষ্য দেবে। তখন সে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি অসন্তুষট হয়ে বলবে, তোমরা ধ্বংস হও, আমি তো দুনিয়াতে যা কিছু করেছি তোমাদের সুখের জন্যই করেছি। এখন তোমরাই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে শুরু করলে। ( সহীহ মুসলিম।)

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এ দিন মানুষের মুঝে মোহর এঁটে দেওয়া হবে এবং উরুকে বলা হবে, তুমি কথা বল এবং তার কাজকর্ম বর্ণনা করো। তখন মানুষের উরু, মাংস, অস্থি সবই তার কাজের সাক্ষ্য দেবে। -(মাযহারী, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৭ম খণ্ড, ৩৩৬)

এ জাতীয় আরো সংবাদ

প্রিয় নবীর ভালোবাসায় ৪০ বছর মদিনায় আগতদের আপ্যায়ন করা শায়েখ ইসমাইল আল-জায়ীম আবুস সিবা’ আর নেই

নূর নিউজ

রমজানের পরও যেসব আমলের প্রতি যত্নশীল হবেন

নূর নিউজ

নবী সা. প্রতি বিরল ভালোবাসা

নূর নিউজ