পবিত্র কোরআনের ৫৬ নম্বর সুরা আল-ওয়াকিয়া। মক্কায় নাজিল হওয়া এই সুরায় মহান আল্লাহর অনন্ত-অসীম ক্ষমতার বিবরণ স্থান পেয়েছে। কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার বর্ণনা, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান বিষয়ে সন্দেহ পোষণকারীদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে। হাশরের ময়দানের ভয়াবহতা, অগ্রবর্তী দলের পরিচয়, ডান-বাঁ দিকের লোকদের অবস্থান, আমল অনুযায়ী নিয়ামত ও আজাব ভোগের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
দুনিয়ার কৃষিকাজ, ফসল উৎপাদন, দৃশ্যে জীবনের গুপ্ত রহস্য এবং জান্নাতে সংরক্ষিত হুরদের সৌন্দর্য, নিয়ামত প্রাচুর্যের সুনিপুণ নকশা প্রকাশ করা হয়েছে।
সুরা ওয়াকিয়ার গুরুত্ব-তাৎপর্য সম্পর্কে ইবনে আব্বাস রা. থেকে একটি বর্ণনা আছে। তিনি বলেন, একদিন আবু বকর রা. বলেন, হে আল্লাহর রাসুল সা.) আপনি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন! তখন রাসুল (সা.) বলেন, হ্যাঁ, আমাকে সুরা হুদ, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুরসালাত, সুরা আম্মা ইয়্যাতাসা আলুন এবং সুরা ইয়াশ শামসু কুউয়িরাত বৃদ্ধ করে ফেলেছে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩২৯৭)
সুরা ওয়াকিয়ার ফজিলত
হাদিস-তাফসিরের গ্রন্থসমূহে সুরা ওয়াকিয়ার বিভিন্ন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করবে তার ওপর অভাব আসবে না। (বায়হাকি, হাদিস : ২৪৯৭, তাফসিরে রুহুল মাআনি : ২/১২৮)
সুরা ওয়াকিয়া কখন পড়তে হয়
দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি সময়। মহান আল্লাহ এ দুই সময়ে জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন। মাগরিবের নামাজের পর সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইসলামী স্কলাররা।
সুরা ওয়াকিয়া শেখা-শেখানো
সুরা ওয়াকিয়া পাঠের বিশেষ একটি শিক্ষা পাওয়া যায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর সঙ্গে আমিরুল মুমিনিনের বিশেষ কথোপকথন থেকে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. যখন অন্তিম শয্যায় শায়িত ছিলেন তখন ওসমান রা. তাঁকে দেখতে গিয়ে বলেন, আপনার অসুখটা কী? ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমার পাপ আমার অসুখ। ওসমান রা. বলেন, আপনার বাসনা কী? তিনি বলেন, আমার পালনকর্তার রহমত কামনা করি। তিনি বলেন, আমি সরকারি বায়তুল মাল থেকে কোনো উপঢৌকনের ব্যবস্থা করে দেব, যা আপনার এবং আপনার কন্যাদের উপকারে আসবে? ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি আমার কন্যাদের সুরা ওয়াকিয়া শিক্ষা দিয়েছি।
আমি রাসুল সা.-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে, অভাব তাকে কখনো স্পর্শ করবে না। (তাফসিরে জালালাইন আরবি-বাংলা : ৬/৩৫৩)
মহান আল্লাহ সবাইকে এই সুরা নিয়মিত পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।