মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান
রাবেয়া বসরী পিতামাতার চতুর্থ কন্যা ছিলেন, এইজন্যই তার নাম রাবেয়া অর্থাৎ (চতুর্থ) রাখা। তিনি অভাবের একেবারেই চুড়ান্ত সিমায় ছিলেন কিন্তু অত্যন্ত সম্মানিত পরিবারের ছিলেন।
রাবেয়া বসরীর পিতামাতার অভাবের অবস্থা নিম্নোক্ত ঘটনার দ্বারা ই উপলব্ধি করা যেতে পারে যে, যেই রাতে রাবেয়া বসরী জন্মলাভ করেন সেই রাতে বাতি জ্বালানোর জন্য তাদের ঘরে এতটুকু পরিমাণ তৈল ছিল না।এবং সদ্য জন্মানো শিশুকে শুয়ে রাখার জন্য কোনো কাপড় ও ছিল না।
রাবেয়া বসরীর মাতা তার পিতাকে অনুরোধ করলেন পড়শীদের কাছ থেকে কিছু তৈল নিয়ে আসেন যেন বাতি টুকু জ্বালানো যায়।
কিন্তু রাবেয়া বসরীর পিতা সারাজীবন একমাত্র আল্লাহতায়ালা ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতেননি। স্ত্রীর কথা শুনে তিনি পড়শীর দরজা পর্যন্ত তো গেলেন কিন্তু খালি হাতেই ফিরে আসেন।
সে রাতেই রাবেয়া বসরীর পিতা স্বপ্নে বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সাঃ)এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। স্বপ্নে বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সাঃ) রাবেয়া বসরীর পিতাকে সু সংবাদ দিলেন যে, তোমার সদ্যোজাত সন্তান আল্লাহতায়ালার প্রিয় বান্দী হবেন।এবং মুসলমানদেরকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসবেন।
তুমি বসরার গভর্নরের কাছে যাও।তাকে আমার পক্ষ থেকে এই সংবাদ জানিয়ে দাও যে, তুমি ( বসরার গভর্নর) প্রত্যেক দিনরাত্রিতে ১০০ বার এবং জুমার রাতে ৪০০বার মোহাম্মদ (সাঃ)এর প্রতি দুরুদ শরীফের হাদিয়া প্রেরণ করে থাকো,কিন্তু গত জুমার রাতে তুমি দুরুদ শরীফ পড়নি। এইজন্য তার কাফফারা হিসেবে ৪০০দিনার সংবাদবাহককে কাফফারা দিয়ে দেয়।
রাবেয়া বসরীর পিতা জাগ্রত হয়ে বসরার গভর্নরের নিকট গেলেন।
যখন বসরার গভর্নর রাবেয়া বসরীর পিতার মারফত হুজুর (সাঃ)এর এই সংবাদ পেলো, তখন সে এই সংবাদ পেয়ে খুব আনন্দিত হল এই ভেবে যে আখেরী নবী মোহাম্মদ (সাঃ) তাকে এই সংবাদ দিয়েছেন।
বসরার গভর্নর তখন শুকরিয়া আদায় হিসেবে ১০০০দিনার গরীবদের মাঝে দান করে দিলেন।আর রাবেয়া বসরীর পিতাকে ৪০০ দিনার দিলেন। পাশাপাশি রাবেয়া বসরীর পিতাকে বললেন আপনার যখন যা প্রয়োজন হবে সংকোচহীন আমার কাছে চলে আসবেন।
কিছুদিন পর রাবেয়া বসরীর পিতার ইন্তেকাল হয়ে যায়। আর ঐসময়ে বসরাতে দূর্ভিক্ষ প্রচন্ডভাবে দেখা দেয়।
ঘটনাক্রমে রাবেয়া বসরী ঐসময় নিজ বোনদেরকে হারিয়ে ফেলে। রাবেয়া বসরী যে কাফেলার দিকে যাত্রা করছিলো ডাকাতদল সেই কাফেলায় লুটপাট করে। যাবার সময় ডাকাতদলের সরদার রাবেয়া বসরীকে নিয়ে যায় এবং বাজারে দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়।
রাবেয়া বসরীকে যিনি ক্রয় করেন তিনি রাবেয়া বসরীকে দিয়ে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে কষ্টকর কাজ করাতো। এত কষ্টের মধ্যে ও রাবেয়া বসরী দিনের বেলায় মালিকের কাজ করতো এবং রাতভর উল্লাহ তায় এবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকতো। আর দিনের বেলায় অধিকাংশ ই রোজা রাখতেন।
ঘটনাক্রমে একবার রাবেয়া বসরীর মালিক অর্ধেক রাতে জাগ্রত হলেন। এবং কারো কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে দেখার জন্য গেলেন যে এই রাতের বেলায় কে কান্নাকাটি করছে।
মালিক গিয়ে যা দেখলেন তা দেখে আশ্চর্য হলেন। দেখে যে, রাবেয়া বসরী আল্লাহতায়ালার সামনে সিজদাহ্ রত অবস্থায় অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতেছিলেন যে, হে আল্লাহ, তুমি আমার অপারগতা সম্পর্কে ভালো করে ই অবগত আছো।ঘরের কাজকর্ম আমাকে তোমার কাছে আসতে বাধা দেয়।তুমি তো তোমার এবাদত করার জন্য আমাকে আহবান কর।কিন্তু যখন আমি তোমার দরবারে উপস্থিত হয় তখন নামাজের সময় চলে যায়। এইজন্য আমার এই অপারগতা ক্ষমা করে দাও। এবং আমার গোনাহ সমূহকে মাফ করে দাও। এদিকে নিজ দাসীর এই কথাগুলো শুনে এবং তার এবাদত দেখে মালিকের অন্তর আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হতে লাগলো।
তখন মালিক এই সিদ্ধান্ত নিলো যে,এমন আল্লাহওয়ালা বান্দী দিয়ে আর কাজ করাবেনা, প্রয়োজনে নিজে তার খেদমত করিবে।
সকাল হতেই মালিক রাবেয়া বসরীর কাছে আসলেন, এবং নিজের সিদ্ধান্তের কথা বললেন।
মালিক বললো আজ থেকে আপনি আযাদ (স্বাধীন)। এখন থেকে আপনি যদি আমার বাড়িতে বসবাস করেন তাহলে আমার জন্য তা সৌভাগ্যের বিষয় হবে। অন্যথায় আপনি আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক।
অগত্যায় যদি আপনার যেতেই হয় তাহলে আমার পক্ষ থেকে একটি অনুরোধ থাকবে, আর তা হলো, আমার থেকে হওয়া সমস্ত বেয়াদবি ক্ষমা করে দিবেন ঐ আল্লাহপাকের উসিলায় যার এবাদত আপনি রাত জেগে করে থাকেন।
মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান
উস্তাদ, জামিয়া কোরআনিয়া সৈয়দা সৈয়দুন্নেছা ও কারিগরি শিক্ষালয় কাজীপাড়া ব্রাক্ষণবাড়ীয়া।