লাফিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী, হাসপাতালে শয্যা খালি নেই

দেশে ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে গরমের তীব্রতায় ডায়রিয়ার প্রকোপ সংখ্যা বাড়ছে। ফলে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিআরবি) ছুটে আসছে।

ওয়ার্ডগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ হওয়ায় গত শুক্রবার থেকে হাসপাতাল আঙ্গিনায় দুইটি বড় তাবু টানিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাতে করেও জায়গা সংকুলান হচ্ছেনা। চাপ সামাল দিতে চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসকরা বলেন, সাধারণত অন্য বছরগুলোতে শিশু রোগীরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিন্তু এবার তার বিপরীত চিত্র ঘটছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে তীব্র পানিশূন্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চৈত্রের অসহ্য গরমে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিরাপদ পানীয় পান করায় ডায়রিয়ার তীব্রতা বেড়েছে।

তারা বলছেন, আগের বছরগুলোতে তাদের হাসপাতালে গরমের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী ভর্তি হতো। কিন্তু এবারের গরমে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ১৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ৯ দিনের মধ্যে নতুন ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কোন দিনও এক হাজারের নিচে নামেনি বলেও জানান এই চিকিৎসক।

গত ১৬ মার্চ ১ হাজার ৫৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। পরদিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৪১ জনে। ২০ মার্চ রোগীর সংখ্যা হয় ১ হাজার ১৫৭, ২১ মার্চ ১ হাজার ২১৬, ২২ মার্চ ১ হাজার ২৭২ ও ২৩ মার্চ ১ হাজার ২৩৩ জন। ২৪ মার্চ ১ হাজার ১৭৬ জন এবং ২৫ মার্চ ১ হাজার ১৩৮ জন, মার্চ ১ হাজার ২৪৫ জন এবং সর্বশেষ রোববার দপুর ১২টা পর্যন্ত ৫৩৯ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে।

আইসিডিডিআর,বি হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, এখানে আসা কোন রোগীকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছেনা। তারা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করছেন। হাসপাতালের রিসার্চ ফিজিশিয়ানদের অনেকে সেবা দিচ্ছেন। জায়গা সংকুলান না হওয়া বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। চাপ আরও বাড়লে প্রয়োজনে তাদের অফিস কক্ষগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কেউ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে নিকটস্থ কেন্দ্রে গেলে এখানে চাপ কমবে। এছাড়া রোগীর সঙ্গে এটেনডেন্সদের অযথা ভিড় না করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কারণ বেশি জনসমাগমে রোগীদের সেবা ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয়।

আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর কয়েকটি এলাকা থেকেই ঘুরেফিরে বেশি ডায়রিয়া রোগী আসছে। এর মধ্যে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শনিরআখড়া, মিরপুর, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, উত্তরখান, উত্তরা ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার থেকে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি। এসব রোগীদের অধিকাংশই কলেরা আক্রান্ত।
রাজধানীর বাইরের সাভার, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ থেকেও রোগী আসছে। হাসপাতালের শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা মো.নাজমুল ইসলাম বলেছেন, গ্রীষ্মকাল আসার আগে আগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বাড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ সচেতন আছে।

নাজমুল ইসলাম বলেন, দৈনন্দিন কাজকর্মে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করলে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে ও দৈনন্দিন সুপেয় পানি পান করলে ডায়রিয়া রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তাছাড়া হাসপাতালগুলোতে খাবার স্যালাইন, আইভিফ্লুইড স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সরবরাহ রয়েছে। অল্প ডায়রিয়া থাকতেই যে কোনো অবস্থাতেই কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই: প্রধানমন্ত্রী

নূর নিউজ

দেশে সাইবার হামলার হুমকি, সতর্কতা জারি

নূর নিউজ

রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম বাড়ল

নূর নিউজ