শান্তি ও মুক্তির একমাত্র পথ

ইসলাম কেবল গুটিকতক আচার অনুষ্ঠানের নাম নয়। ইসলামের ইবাদত সার্বক্ষণিক, উঠতে, বসতে, চলতে, ঘুমোতে, গৃহে, সমাজে, অফিসে, রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে, এক কথায় সর্বক্ষেত্রে। মানুষের জীবন, প্রয়োজন এবং কর্মপ্রবাহের কোনো একটি দিক সম্বন্ধেও ইসলাম উদাসীন নয়।

এ ছাড়া ইসলামি জীবনব্যবস্থা মানবজাতির জন্য একটি সাময়িক ব্যবস্থা নয়। ইতিহাসের কোনো এক অধ্যায়ের জন্যই কেবল তা প্রেরিত হয়নি বা কোনো বিশেষ পরিবেশের জন্যও তা নির্দিষ্ট হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হচ্ছে গতিশীল মানবজীবনের জন্য একটি মৌলিক বিধান।

মানবসভ্যতার সর্বশেষ অধ্যায় পর্যন্ত মানুষ তার জীবনকে যাতে অবতীর্ণ বিধানের আলোকে পরিচালিত করতে পারে এমন এক বৈশিষ্ট্য দিয়েই ইসলামকে প্রেরণ করা হয়েছে। এ সত্য পথের অনুসৃতির মাধ্যমেই মানুষ মর্যাদাবান হতে পারে। নির্ভেজালভাবে আল্লাহ প্রদত্ত এ বিধান অনুসরণ করেই মানুষ সম্মানিত হতে পারে। অনাগত মানবগোষ্ঠীর জন্য ইসলাম বিশ্বজনীন সদাসত্য বিধান হিসাবে বিদ্যমান।

ইসলাম প্রকৃতই যে জীবনের সব ক্ষেত্রে শান্তির নিশ্চয়তা দেয়, তা মহানবি (সা.) নিজে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। ইসলামের গৌরবজনক ইতিহাস, অনুশাসন, ঐতিহ্যবাহী জীবন ব্যবস্থায় নারীর মূল্যায়ন, পুরুষসহ সব মানুষের সমান অধিকারের প্রশ্ন ও প্রেক্ষিত এবং সমাধান দেখে ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই ইমান এনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। সবাই এ কথাও বলতে বাধ্য হয়েছিল, ইসলামই একমাত্র শান্তির ধর্ম হতে পারে। তাই সবাই ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবেই গ্রহণ করেছে। এ শান্তির ধর্মে কোনো ধরনের বল প্রয়োগের শিক্ষা নেই।

কাউকে হত্যার ব্যাপারে ইসলামের শিক্ষা কতই না অতুলনীয়। ইসলাম কাউকে হত্যা করার শিক্ষা দেয় না। হত্যার ব্যাপারে ইসলামের শিক্ষা হলো, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আর কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে এর প্রতিফল হবে জাহান্নাম। সেখান সে দীর্ঘকাল থাকবে। আর আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত। তিনি তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য এক মহা আজাব প্রস্তুত করে রেখেছেন’ (সূরা আন নেসা, আয়াত : ৯৩)।

কাউকে হত্যার ব্যাপারে মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে প্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা করা হবে, তা হবে রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত’ (বোখারি)।

কাউকে হত্যা করাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে, শুধু নিষেধ করেই শেষ করেনি, বরং যারা এসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কার্যক্রম করে, তাদের শাস্তি কত ভয়াবহ, সে সম্পর্কেও অবহিত করা হয়েছে। ইসলামের শিক্ষা কত উন্নত যে, বল প্রয়োগ করে ইসলামের প্রচার করতে পর্যন্ত বারণ করা হয়েছে।

এত উন্নত শিক্ষা ইসলামের থাকা সত্ত্বেও আজ গুটিকতক উন্মাদ ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে অভিযোগ করে, ইসলাম নাকি সন্ত্রাসের শিক্ষা দেয়, নাউযুবিল্লাহ। অথচ ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সব সময় সোচ্চার। যদি আমরা ইসলাম ও মহানবির (সা.) জীবনাদর্শ পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখতে পাই, কতই না উন্নত শিক্ষা ছিল তাঁর।

আঘাতে জর্জরিত করা হয়েছে, কিন্তু তিনি পালটা প্রতিশোধ না নিয়ে করেছেন ক্ষমা। দুহাত তুলে শত্রুদের সংশোধনের জন্য দোয়া করেছেন। আমরা দেখতে পাই, কতক এমনও আছেন, যারা মহানবির (সা.) জিহাদের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি ইসলামের জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। হ্যাঁ, তিনি (সা.) জিহাদ করেছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি তা কেন করেছেন, তা-ও বুঝতে হবে। তিনি কি কোনো লোভে বা রাজত্ব দখলের আশায় অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন? মোটেও না। তিনি আল্লাহপাকের আদেশে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

ইসলামের নির্দেশিত সব কর্মসম্পাদন করতে হয় সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলার মাধ্যমে। ইসলামে খামখেয়ালির কোনো অবকাশ নেই। ইসলাম দুনিয়ার জমিনে এসেছে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য। আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠনবি মহানবি (সা.) তদানীন্তন আরবের করুণ, বিশৃঙ্খল, জাহেলি ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমরা শেষে এ কথাই বলতে পারি, ইসলামই মানুষকে সব ধরনের অশান্তি থেকে মুক্ত করে শান্তি দিতে পারে। তাই নিজেকে মুসলমান দাবি করে গুটিকতক আচার অনুষ্ঠানে নিজেকে সীমাবদ্ধ না করে সবার জন্য শান্তির কারণ হতে হবে। কেননা আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, আমরা শান্তির ধর্ম ইসলাম এবং শ্রেষ্ঠনবির উম্মত হওয়ার তৌফিক লাভ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। তাই আসুন না! আমরা সবাই এ শান্তিময় ধর্মের পরিপূর্ণ অনুসরণ করে নিজেদের জীবন পরিচালনা করি, আর বিশ্বকে শান্তিময় হিসাবে গড়ে তুলি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

কানটুপি পরে নামাজ পড়ার বিধান

নূর নিউজ

ওমরা পালনে নতুন করে আরারও বিধিনিষেধ আরোপ করলো সৌদি সরকার

নূর নিউজ

এখন সমস্ত নফল ইবাদতের চেয়ে গাজার বাসিন্দাদের সাহায্য করা উত্তম

নূর নিউজ