শয়তান যাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না

শয়তান মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। শয়তান মানুষকে ধোঁকা দেয়। মন্দ কাজে প্রলুব্ধ করে। ক্রমে ক্রমে আল্লাহ কুফর ও শিরকে লিপ্ত করে। সবশেষে চিরদুঃখের ও অশান্তির জায়গা জাহান্নামে পৌঁছিয়ে দেয়।

শয়তান থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহ তাআলা কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বলেছেন। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২১)

মানুষের শত্রু দুই ধরনের…

ইবনে কাসির রহ. তার তাফসির গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন, মানুষের শত্রু দুই ধরনের। এক. মানব জাতির মধ্য থেকে, যেমন সাধারণ কাফের ও অবিশ্বাসীরা। দুই. জিনদের মধ্য থেকে অবাধ্য শয়তানের দল।

প্রকাশ্য শত্রু

ইসলাম প্রথম প্রকার শত্রুকে জিহাদ ও লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকার শত্রুর জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার আদেশ দিয়েছে। কারণ, প্রথম প্রকার শত্রু স্বজাতীয়। তার আক্রমণ প্রকাশ্যভাবে হয়, তাই তার সাথে জিহাদ ও লড়াই ফরজ করা হয়েছে।

চোখে দেখা যায় না এমন শত্রু

বিপরীতে শয়তানের শত্রুতা চোখে দেখা যায় না। তার আক্রমণও মানুষের ওপর সামনাসামনি হয় না। তাই তাকে প্রতিহত করার জন্য এমন সত্ত্বার আশ্রয় গ্রহণ অপরিহার্য করা হয়েছে, যিনি মানুষ ও শয়তান কারও দৃষ্টিগোচর নন। আর শয়তানকে প্রতিহত করার বিষয়টি আল্লাহর কাছে সমর্পণ করার যথার্থতা এই যে, যে ব্যক্তি শয়তানের কাছে পরাজিত হবে, সে আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত এবং আজাবের যোগ্য বলে গণ্য হবে।

যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তায়ালাই সৎ কাজের তাওফিক দাতা এবং প্রত্যেকটি অনিষ্ট থেকে রক্ষাকারী, এর পাশাপাশি যেকোনও অবস্থা ও কাজকর্মে নিজের ইচ্ছাশক্তির পরিবর্তে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, এ ধরনের মানষের ওপর শয়তান আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না।

আল্লাহর কাছে মর্যাদা

তবে মানব শত্রুর বেলায় বিষয়টি এমন নয়। কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধে কেউ পরাজিত হলে কিংবা নিহত হলে সে শহীদ ও সওয়াবের অধিকারী হবে। তাই দেহ ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে মানব শত্রুর মোকাবিলা করা সবসময় লাভজনক। কারণ, এতে বিজয়ী হলে শত্রুর শক্তি নিশ্চিহ্ন হবে এবং পরাজিত হলে শহীদ হয়ে আল্লাহর কাছে মর্যাদার অধিকারী হবে।

শয়তান যাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না…

মুফাসরিরগণ বলেন, আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে এমন কোনও শক্তি দেননি যাতে করে সে যেকোনোভাবে মানুষকে মন্দ কাজে বাধ্য করতে পারে। মানুষ নিজের ক্ষমতা ও শক্তি অসাবধনাতা বশত কিংবা কোনও স্বার্থের কারণে প্রয়োগ না করলে সেটা তার দোষ।

তাই বলা হয়েছে যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তায়ালাই সৎ কাজের তাওফিক দাতা এবং প্রত্যেকটি অনিষ্ট থেকে রক্ষাকারী, এর পাশাপাশি যেকোনও অবস্থা ও কাজকর্মে নিজের ইচ্ছাশক্তির পরিবর্তে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, এ ধরনের মানষের ওপর শয়তান আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না।

আর যারা সব কাজে আল্লাহর ওপর ভরসা করতে পারে তারাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা। বর্ণিত হয়েছে, (আল্লাহ বলেন) আমার (খাঁটি ও নেককার) বান্দাদের ওপর তোমার কোনো কর্তৃত্ব নেই। কর্মবিধায়ক হিসেবে তোমার রবই যথেষ্ট। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৬৪-৬৫)

সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, যারা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে শয়তান তাদেরকে এমন গুনাহে লিপ্ত করতে পারে না যা থেকে সে তওবা করে না। কেউ কেউ বলেন, যারা আল্লাহর উপর ভরসা রাখে শয়তান তাদের কাছে কোন প্রমাণ দিয়ে টিকে থাকতে পারে না।

শয়তানের আধিপত্য যাদের ওপর

তবে যারা আত্মস্বার্থের কারণে শয়তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, তার কথাবার্তা পছন্দ করে এবং আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার সাব্যস্ত করে, তাদের ওপর শয়তান আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে তাদের কোনও সৎ কাজ করতে দেয় না এবং তারা মন্দ কাজের সবার আগে থাকে।

আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা

শয়তান সব সময় মানুষের ভালো কাজে বিঘ্নতা সৃষ্টি করে। এমনকি কোরআন তেলাওয়াতের সময়ও বিঘ্নতা সৃষ্টি করে তাই শয়তানের ধোঁকা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে।

বর্ণিত হয়েছে, সুতরাং যখন আপনি কোরআন পাঠ করবেন, তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও তাদের রবেরই ওপর নির্ভর করে, তাদের ওপর তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই। তার আধিপত্য তো শুধু তাদেরই উপর যারা তাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে। (সুরা নাহল, আয়াত, ৯৮-১০০, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯১-৩৯৪)

এ জাতীয় আরো সংবাদ

মসজিদে রাত্রিযাপন অবস্থায় গোসল ফরয হলে কি কাপড় বিছিয়ে তার উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে বের হতে হবে?

নূর নিউজ

কুরআনে বর্ণিত ‘আবাবিল’ পাখি কি এখনও আছে?

নূর নিউজ

হজের ফিরতি ফ্লাইট শুরু আজ

নূর নিউজ