আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে হার্ডলাইনেই থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর চলমান আন্দোলন কর্মসূচি মোকাবিলা করা হবে রাজনৈতিকভাবে। আন্দোলনরত দলগুলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি করছে তা মানা হবে না। বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তাদের। এ অবস্থায় পুলিশ নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সরকারের বার্তা। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেখানেই বিশৃঙ্খলা বা নাশকতা হবে সেখানেই করতে হবে আইনের কঠোর প্রয়োগ। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, বেশ কয়েক মাস ধরে আন্দোলনকারীদের প্রতি পুলিশের অবস্থান ছিল অনেকটা সহনশীল। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে এ অবস্থা আর থাকবে না। পুলিশের অবস্থান থাকবে কঠোর। পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন শনিবার রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হলে তা কঠোরহস্তে দমন করা হবে। সরকারের বার্তা পেয়েই আইজিপি এ ধরনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।
পুলিশ জানায়, নির্বাচন ঘিরে এবার গণগ্রেফতার হবে না। তবে অস্থিতিশীল কোনো ঘটনা ঘটলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের ভয়ের মধ্যে রাখবে পুলিশ। সন্দেহজনক কাউকে পেলেই আটক করা হবে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেই মামলা দায়ের করে আদালতে হাজির করা হবে। যাদের নামে আগের মামলা আছে তাদের গ্রেফতারে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা জামিনে আছেন তারা নতুন করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। আগের মামলায় যারা আদালতে হাজিরা দিতে যাচ্ছেন তাদের জামিন না দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। গত তিন দিনে রাজধানীর লালবাগ এবং যাত্রাবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি নতুন মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৮ জুলাইয়ের পর থেকে প্রতিদিনই বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক বা গ্রেফতার করা হচ্ছে। অস্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনার পৃথক দুই মামলায় রোববার ছাত্রদলের ছয় নেতাকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের অস্ত্র গুলিসহ লালবাগ থেকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও বিএনপির অভিযোগ শুক্রবার তাদের আজিমপুর থেকে তুলে নেয় ডিবি পুলিশ। শনিবার রাতে বিএনপি নেতা তানভীর আহাম্মেদ রবিনসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ডিবি জানিয়েছে। ডিবি আরও জানায়, তাদের বিরুদ্ধে শনিবার যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় রোববার তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
শনিবার এক অনুষ্ঠানে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি নির্বাচনের বছরই বিভিন্ন মহল থেকে পুলিশকে হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশ কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে সে বিষয়ে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়। কোনো প্রেসক্রিপশনে ভীত না হয়ে আমরা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করব। তিনি বলেন, রাজধানীতে দুই কোটি মানুষের বাস। যারা এই দুই কোটি মানুষের চলাফেরা বাধাগ্রস্ত করবে, যানবাহনে ভাঙচুর করবে, হামলা-অগ্নিসংযোগ করবে, বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ পুড়িয়ে মারবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই দায়িত্ব আমাদের পালন করতেই হবে। বাংলাদেশকে কখনো এমন জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত সফল হতে দেব না, যেখানে ৬৩টি জেলার ৫০০ জায়গায় আবার বোমা হামলা হবে। যেখানে গোপাল-কৃষ্ণরা নিজের ঘরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে।
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, যে আমলে রাজনীতি করার অপরাধে আহসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এএসএম কিবরিয়া, মমতাজ উদ্দিন আহমেদরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, আমরা আবার সেই আমলে ফিরে যেতে চাই না। তিনি বলেন, সার কৃষকের ন্যায্য পাওনা। এটা দাবির বিষয় নয়। কিন্তু যে আমলে সারের জন্য কৃষককে প্রাণ দিতে হয়েছে আমরা সেই আমলে ফিরতে চাই না। আমরা এমন যুগে থাকতে চাই, যেখানে আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে যাবে না। যেখানে বিদ্যুৎ নেই, কেবল তারবিহীন খাম্বা আছে, সেখানেও আমরা ফিরে যেতে চাই না। আমরা সেই চক্রান্ত সফল হতে দেব না। তিনি বলেন, যে কোনো দুর্যোগের বিরুদ্ধে জনগণের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ অতীতে যে ধরনের দায়িত্ব পালন করেছে এবারও সে ধরনের দায়িত্ব পালন করবে। আগামী দিনে গণতন্ত্র এবং দেশবিরোধী যে কোনো চক্রান্ত আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব। পুলিশ নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করবে।