‘সরকার পতন আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে ড. ইউনূস ইস্যু আনা হয়েছে: মির্জা ফখরুল, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ইউনূস ইস্যুতে আশ্রয় নিয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এও বলেছেন, সরকার পতনের একদফা আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে ড. ইউনূস ইস্যু সামনে আনা হয়েছে।

বুধবার সকালে রাজধানীর পান্থপথে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য রক্তদান কর্মসূচি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ড. ইউনূসের ব্যাপারটা আমরা এভাবে দেখি, এখানে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার ব্যাপার রয়েছে। আরেকটা ব্যাপার আছে, এই মুহূর্তে এটাকে এত দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা; ইটস আ ডাইভার্সন অব দ্য মেইন ইস্যু। আমাদের প্রধান যে ইস্যুটা, সরকার পরিবর্তন করতে হবে, পদত্যাগ করতে হবে। সেটা ডাইভার্ট করার জন্য এটাকে সামনে নিয়ে এসেছে সরকার।’

ইউনূসকে নিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে উনি (ইউনূস) প্রাধান্য পাচ্ছেন। অর্থাৎ তাদের যে লক্ষ্য ছিল যে, এটাকে ডাইভার্ট করবে, কিছুটা হলেও তারা সেটা পেরেছে,’ যোগ করেন তিনি।

ফখরুল আরও বলেন, ‘সেই কারণে আমি মনে করি, ড. ইউনূসের ইস্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। অধিকারের কর্মী আদিলুর রহমান, আগামীতে তার রায়ও হবে। আমি জানি না রায় কী আসবে, এটা বুঝতে পারি—তারা যেন সত্য কথা বলতে না পারে, তারা যেন মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে না পারে, সেই জন্য তাদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলা নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্তের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ড. ইউনূসের পক্ষে কথা বলার জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। এ রকম একটা রাষ্ট্র, যে রাষ্ট্রে সত্য কথা বলার কোনো উপায় নেই, যে রাষ্ট্রে মানুষের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই, যে রাষ্ট্রে মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, সেই রাষ্ট্র অবশ্যই ভেঙে পড়ছে।

তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে আমরা যদি এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারি তাহলে দেশকে রক্ষা করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থকার কারণে ঢাকার জনপ্রতিনিধিদের দোষারুপ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মূল কথা হচ্ছে সরকার এবং সিটি করপোরেশন দুটি ব্যর্থ হয়েছে ডেঙ্গু মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে। এরা প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্য সেবা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। স্বাস্থ্য খাতে চরম অরাজকতা আমরা কোভিডের সময় দেখেছি—দেখেছি কী পরিমাণ দুর্নীতি এখানে হয়।

মশার ওষুধ কেনায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আবার সিটি করপোরেশনে এটা প্রমাণিত হলো, এডিস মশা ধ্বংসের নামে যে ওষুধ কেনা হলো সেখানেও ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, সেই ওষুধগুলো মধ্যে কোনো গুণই নেই! সেটা মশা নিধনে সাহায্য করছে না।

তিনি বলেন, এখানে অনির্বাচিত যে স্থানীয় সরকার; কমিশনার বা মেয়র, জনগণের কাছে তাদের যেহেতু দায়বদ্ধতা নেই, সেই কারণে তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন এই সমস্যা সমাধান করতে। কারণ তাদের তো এদিকে নজর নেই, তাদের নজর হচ্ছে দুর্নীতি; টাকার পাহাড় তারা গড়ে তুলছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মনোনয়নে মেয়র পদে নির্বাচন করা ইশরাক হোসেন এবং উত্তরের তাবিথ আউয়াল।

 

এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি বলে বেড়াচ্ছে তাদের আন্দোলন ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ সামনে আনা হচ্ছে। কিন্তু দেশের জনগণ মনে করে বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন ইউনূসের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে।’

আজ বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বেদনাতুর ১৯৭৫ আগস্টের শহীদদের আলেখ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। বইটি লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেবউননেছা।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ড. ইউনূসের প্রতি সম্মান রেখে জানতে চাই নোবেল পেলে কেউ কি আইনের ঊর্ধ্বে চলে যান? উনার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তা দেননি বলে অভিযোগ উঠছে। যদি উনি দিয়ে থাকেন, তাহলে আদালতে প্রমাণ করবেন। এত ইস্যু তৈরির তো কোনো প্রয়োজন নেই।’

মন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল জাতিরাষ্ট্রকে হত্যা করা। এ হত্যাকাণ্ড মানব ইতিহাসের জঘন্য হত্যাকাণ্ড। কারবালার প্রান্তরে নারী শিশুদের রেহাই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পরিবারের নারীসহ ছোট্ট শিশু রাসেল, সবাইকেই হত্যা করা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। এমনকি তাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আইয়ুব খান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাকে বলা হয়েছিল, ৬ দফার দুটি দফা বাদ দিতে। তার বিপরীতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ৭০‘র নির্বাচনের আগে ৬ দফা ছিল আওয়ামী লীগের। এখন তা জনগণের দফা। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাঙালিদের মুক্তি নেই। তাই তিনি ৬ দফা প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি যখন মনে করলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দেওয়া দরকার, তখনই স্বাধীনতার ডাক দিলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা দখল করার পর তাকে (জিয়াউর রহমান) সেনাপতি বানানো। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য, যারা খুনের ওপর দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন, তারা এখন রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং ভোটও পান। রাত-বিরাতে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেন। অথচ কেউ তাদের তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা নেননি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, শিল্পী হাশেম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

সৌদিতে বিনামূল্যে টিকা পাবে বাংলাদেশিরা

আলাউদ্দিন

ঈদের দিন রোদ না বৃষ্টি, জানাল অধিদপ্তর

নূর নিউজ

ফোন করে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানালেন মোদি

নূর নিউজ