সৌদি আরবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ইয়াহুদিদের উপাসনালয়

দখলদার ইসরাইল থেকে প্রকাশিত আরবি দৈনিক গ্লোবস্‌ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় ইসরাইল ও সৌদি আরবের মধ্যে বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি সই হয়েছে।

২০২০ সাল থেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত চারটি দেশ অর্থাৎ বাহরাইন, আমিরাত, মরক্কো ও সুদান ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। ট্রাম্পের শাসনামলের শেষের দিকে সৌদি আরবের সঙ্গেও ইসরাইলের সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে ব্যাপক গুঞ্জন শোনা গেলেও এবং বিভিন্ন খবরাখবর প্রকাশিত  হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিরোধী ছিলেন। কেননা তিনি বুঝতেন এর ফলে মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের ভাবমর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে।

এদিকে সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য সম্প্রতি ইসলামি ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের মধ্যে যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে তাতে এ ধারনাই শক্তিশালী হয়েছিল যে, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা হয়তো রিয়াদের নেই। কিন্তু তারপরও গত এক সপ্তাহের ঘটনাবলীতে প্রমাণিত হয়েছে যে সৌদি আরব শুধু দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে তাই নয় একইসঙ্গে আরো বহুমাত্রিক সহযোগিতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে রিয়াদ। এরই অংশ হিসেবে গত সোমবার সৌদি আরবের প্রথম বিমান ইসরাইলে গেছে এবং এর পরের দিন ইসরাইলেরও একটি বিমান রিয়াদ বিমান বন্দরে অবতরণ করেছে।

দৈনিক গ্লোবস্‌ এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে সৌদি আরবের বাজারে ইসরাইলি পণ্য প্রবেশের দরজা খুলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে লিখেছে, এর ফলে ইসরাইলি কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের সামনে বিরাট সম্ভাবনার দরজা খুলে গেল এবং তাদের গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে গেল। এমনকি রাজধানী রিয়াদে ইহুদিদের প্রথম উপাসনালয় উদ্বোধনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। রিয়াদের ওই স্থানটিকে ইহুদিদের সমস্ত ধর্মীয় কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। এ অবস্থায় সৌদি আরব কেন মুসলমানদের এক নম্বর ঘোর শত্রু ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সেটাই এখন প্রশ্ন।

ধারণা করা হচ্ছে এ ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ঠিক যেমনটি ট্রাম্পের শাসনামলে তিনি চারটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্থাপনে ভূমিকা রেখেছিলেন। হিব্রু ভাষায় প্রকাশিত ওয়েব সাইট ‘বালো’র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান গত ২৭ সেপ্টেম্বর রিয়াদে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করে রিয়াদ ও তেলাআবিবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানও সম্প্রতি বলেছেন,  ইসরাইল এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইসরাইল-সৌদি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে বাহরাইন ও আমিরাতের ভূমিকা। মজার বিষয় হচ্ছে এর আগে সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় বাহরাইন ও আমিরাত ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। আর এখন ওই দুই দেশই সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক স্থাপনে মধ্যস্থতা করছে। যদিও ইসরাইল-সৌদি সম্পর্ক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা অনেক আগে থেকে গোপনে বজায় রয়েছে কিন্তু মানামা ও আবুধাবি এখন বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই যে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইলের সঙ্গে এই দেশগুলোর সম্পর্ক স্থাপনের ফলে মুসলিম বিশ্বে তাদের মর্যাদা হ্রাস পাবে বিশেষ করে রিয়াদকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হতে হবে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান হচ্ছেন ক্ষমতার  পূজারি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার সমর্থন লাভের জন্য সালমান সবরকম চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে তিনিই সৌদি আরবের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন। এমনকি সৌদি রাজার পদে যুবরাজ সালমানের অধিষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারেও বাইডেন প্রশাসনের সমর্থন রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

এ কারণে সৌদি যুবরাজ বিন সালমান বাইডেনের সন্তুষ্টি অর্জনের  জন্য ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন বলে অনেকে মনে করছেন। যাতে সৌদি রাজার পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থন পেতে যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিবাদী লবিং গ্রুপেরও সমর্থন পাওয়া যায়

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সুদানকে চাপ দিচ্ছে আমেরিকা

নূর নিউজ

গ্যাসের কেন্দ্র হবে তুরস্ক: এরদোগান

নূর নিউজ

‘মাঙ্কিপক্স সহজে ছড়ায় না’

নূর নিউজ