নূর নিউজ: মোসারাত জাহান মুনিয়া নামে এক তরুণীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন।
২৬ এপ্রিল সোমবার রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর দায়ের হওয়া মামলায় আসামি করা হয় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। বসুন্ধরার এই শীর্ষ কর্মকর্তা দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লেও আজ তিনি আগাম জামিন আবেদন করলেন। নিয়ম অনুযায়ী আগাম জামিন করতে হলে আসামিকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে হয়।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকার ১৪ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে। বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ কার্যতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
আনভীরের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের হয়েছে গুলশান থানায়। মামলাটি করেছেন মুনিয়ার বোন নুসরাত। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়ের পর ২০১৯ সালে আনভীর মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার মুনিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। তখন আমার বোনকে (মুনিয়াকে) আনভীরের জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন তার মা।
এ ঘটনার পর আনভীর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। গত মাসের (মার্চ) ১ তারিখে গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্যাটটি ভাড়া নেন আনভীর। ১ মার্চ থেকে মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন এবং আনভীর মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন।
গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় ইফতার পার্টিতে গিয়ে মুনিয়া ছবি তোলেন। ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে সেই ছবি পোস্ট করলে সেটি আনভীরের পরিবারের একজন দেখে ফেলেন এবং আনভীরকে জানান। বিষয়টি নিয়ে আনভীর মুনিয়াকে বকাঝকা করেন এবং হুমকি দেন। ২৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে মুনিয়া তার মোবাইল নম্বর থেকে নুসরাতকে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আনভীর আমাকে বিয়ে করবে না, সে শুধু আমাকে ভোগ করেছে। এছাড়া আমাকে সে ‘মনে রাখিস তোকে আমি ছাড়ব না’ বলে হুমকি দিয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, মুনিয়া নুসরাতের কাছে চিৎকার করে বলেন, ‘যেকোনো সময় আমার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তোমরা তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসো।’
মোসারাত জাহান মুনিয়া মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। সোমবার রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গুলশান থানা সূত্রে জানা যায়, মুনিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। বাড়ির মালিক, মালিকের মেয়ের জামাইসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলা সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তারা। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলেই অভিযুক্ত আনভীরকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ।
মুনিয়া যে ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন সেই ভবনের বেশকিছু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও ইতোমধ্যে সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেসব সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ফ্ল্যাটে সায়েম সোবহান আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ পেয়েছে তারা। তবে ঘটনার দিন বা এর আগের দিন মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে এই দুই দিন সন্দেহজনক কারও যাতায়াত ওই বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটের আশপাশে পাওয়া যায়নি।