হাতের ইশারায় বধিররা যেখানে কুরআন শেখে

দুটি রুমে শ খানেক ছাত্র। কিন্তু পুরো রুমজুড়ে নীরবতা। কোথাও কোনো শব্দ নেই। টিকটিকি ডাক দিলে সে শব্দও শোনা যায়। তাদের কেউ কুরআন পড়ছে, কেউ অংক করছে, কেউ দোয়া-কালামের বই পড়ছে। নীরবতার কারণ—তারা সবাই বধির এবং বোবা। তাদের মুখে যেমন বোল নেই, কানে নেই শ্রবণশক্তি। তারা আঙুলের ইশারায় কুরআন পড়ছে, অংক করছে, দোয়া মুখস্থ করছে।

দৃশ্যটি রাজধানীর মাতুয়াইলে অবস্থিত আল নূর এডুকেশন কমপ্লেক্সের দ্বীনিয়াত বধির মাদরসার। এর প্রতিষ্ঠাতা মুফতি সালমান আহমাদ জানালেন, ‘এখানে প্রায় শ খানেক বধির ও বোবা পড়াশোনা করে। তারা যেমন কুরআন হেফজ করছে, তেমনি দোয়া-কালাম মুখস্থ করছে। পড়ছে বাংলা-অংক-ইংরেজিও।’

মাদরাসাটিতে বিভিন্ন বয়সের ছাত্র রয়েছে। কেউ নতুন, কেউ পুরাতন। তারা কথা বলতে পারে না। কথা শুনতে পারে না। তবে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। তাদের মুখের ভাঁজে ফুটে উঠে কথা বলতে না পারার দুঃখ, কথা শুনতে না পারার বেদনা। কিন্তু এতসব অক্ষমতা ও শারীরীক বাধা সত্ত্বেও তারা কুরআন হেফজ করতে এসেছে। তিনজন শিক্ষক সবসময় তাদের তদারকি করেন। শিক্ষকদেরও কথা বলতে হয় মূক ভাষায়।

তারা মুখস্থ করে কিভাবে? জানতে চাইলে মুফতি সালমান আহমাদ ছাত্রদের কাছে নিয়ে গেলেন। ছাত্ররা কুরাআন পড়ে শোনালো। মুখস্থ হাদিস শোনালো। নামাজে কিভাবে কেরাত পড়ে, দেখালো। সবকিছুই করছে তারা ইঙ্গিতে। মুখের বদলে ব্যবহার হচ্ছে দুই হাত। শিক্ষকদেরও পড়াতে হয় ইঙ্গিতে।

দ্বিতীয় বর্ষে পা রেখেছে এই বধির মাদরাসা। ইতোমধ্যে ১৫ জন বধির দুতিনবার করে কুরআন খতম করেছে। এখানের প্রায় সব ছাত্রই ১০টি করে সুরা মুখস্থ পারে। দোয়া-কালাম মুখস্থ পারে। মুখস্থ পারে ২০ করে হাদিস। এখানে বাংলা-অংক-ইংরেজি পড়ানো হয় স্কুলের সিলেবাসে।

এখানে যারা পড়তে আসে, তাদের সবাই নিম্নবিত্ত পরিবারের। তাই তাদের মাসিক পুরো খরচ বহন করেন মুফতি সালমান আহমাদ। সবাই যখন প্রাইভেট মাদরাসা খুলছে, তখন বধিরদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে কিভাবে হলো? মুফতি সালমান আহমাদ বললেন, ‘দ্বীনিয়াত কোর্সের মাধ্যমে শুরু থেকেই চেষ্টা করছি জেনারেল সমন্বয়ে প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষাটা যেন সবাই পায়। আমাদের সুষ্ঠু পরিমার্জিত এবং পরিকল্পিত একটা সিলেবাসও আছে। পুরো বাংলাদেশেই এটা কয়েক হাজার কেন্দ্রে চলছে। এখানে শিশুদের জন্য যেমন সিলেবাস রয়েছে, তেমনি বড়দের জন্যও সিলেবাস রয়েছে। সব স্তরের মানুষকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বধিরদের নিয়ে কাজ শুরু করা।’

তিনি বলেন, ‘সবাই মেধাবীদের নিয়ে কাজ করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লক্ষ বধির রয়েছে, যারা শারীরীক সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, কথা বলতে পারে না, কথা শুনতে পারে না। দেখা যাচ্ছে, তারা সব কাজ করতে পারে, কিন্তু অজুর নিয়মটা জানে না। গোসলের ফরজটা জানে না। যেহেতু আমরা সমাজের শতভাগ মানুষের কাছে ধর্মীয় শিক্ষাটা পৌঁছতে চাই, তাই বধিরদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি।তারাও তো শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষিত হতে পারে। সমাজের বোঝা কমাতে পারে।’

বধিরদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা কী? জানতে চাইলে মুফতি সালমান আহমাদ বলেন, ‘অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। তবে তারা যেহেতু শুনতে পায় না, কথা বলতে পারে না, তারা অনেক সময় অনেক কিছু বুঝতে চায় না। তাদের সামলে রাখতে হয়। আমাদের শ্রম বেশি দিতে হয়। তবে দিনশেষে তারা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটা পাচ্ছে, এটাই সবচেয়ে আনন্দের।’

মুফতি সালমান আহমাদ আরও বলেন, ‘কারও সন্ধানে যদি এমন কোনো বধির থাকে, তারা তাদেরকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে পারে। ইনশাআল্লাহ, আমরা তাদেরকে গ্রহণ করবো।’

 সৌজন্যে : ফাতাহ২৪.কম

এ জাতীয় আরো সংবাদ

দুই জেলার শৈত্যপ্রবাহ কমতে পারে

নূর নিউজ

লন্ডন থেকে সিলেটে আসা ২৮ প্রবাসী করোনা আক্রান্ত

আলাউদ্দিন

ফের বাড়ল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি

আলাউদ্দিন