২০১৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছর মাত্র ৭৫০ ডলার কর দিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবার ক্ষমতার শেষ বছর ২০২০ সালে তিনি কোনো করই দেননি।
দীর্ঘদিন এসব তথ্য গোপন রাখা হয়েছিল। তবে ডেমোক্রেটদের সঙ্গে বহুদিনের তিক্ত লড়াই শেষে শুক্রবার প্রকাশ্যে এলো ট্রাম্পের করের নথি।
এতে দেখা গেছে, সম্পদ হারানো এবং তার কোম্পানির কোনো লাভ না হওয়ার কারণ দেখিয়ে নিজের কর মওকুফ করেছিলেন এই সাবেক প্রেসিডেন্ট। নথি প্রকাশের পর ট্রাম্পের এসব দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ডেমোক্রেটরা।
অপরদিকে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ডেমোক্রেটদের কখনও উচিৎ ছিল না এমনটা করা এবং সুপ্রিম কোর্টেরও উচিৎ হয়নি এমন রায় দেয়া।
সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্প গত ছয় বছরে কত কর দিয়েছেন তার বিস্তারিত নথি প্রকাশিত হয়েছে শুক্রবার। এতে দেখা গেছে, সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকার সময় একেবারেই সামান্য কর ফেরত দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি ব্যাপক পরিমাণ সম্পদ হারানোর কথা উল্লেখ করেছেন। ২০১৯ সাল থেকেই ট্রাম্পের করের নথি প্রকাশ নিয়ে ডেমোক্রেটদের সঙ্গে তিক্ত লড়াই চলছিল।বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়। অবশেষে শুক্রবার সেটি প্রকাশ্যে এলো।
জানা গেছে, সোশ্যাল সিকিউরিটি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বারের মতো কিছু স্পর্শকাতর তথ্য বিশ্লেষণের পর ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের আয়কর নথি প্রকাশ করা হয়েছে। এমন সময় এ নথি প্রকাশ হলো যখন আর মাত্র কয়েক দিন পর ফের প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে চলেছে রিপাবলিকানরা। এই কর নথিগুলো থেকে ট্রাম্পের আর্থিক অবস্থা, মোট সম্পদ, আয়ের উৎস, দাতব্য খাতে অবদান কিংবা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা তার ঋণের তথ্য জানা যাবে।
এর আগে কর সংক্রান্ত জয়েন্ট কমিটির (জেসিটি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প তার ক্ষমতার শেষ বছর ২০২০ সালে কোনো ফেডারেল আয়কর দেননি। ২০১৭ সালে তিনি মাত্র ৭৫০ ডলার আয়কর দিয়েছিলেন। আর ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ট্রাম্প মোট ফেডারেল আয়কর দিয়েছিলেন ১১ লাখ ডলার। দীর্ঘদিন এই বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। তবে হাউজ ওয়েস এন্ড মিনস কমিটি এই তথ্য প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।
এসব রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ট্রাম্পের মোট ১০৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে এবং ২০১৬ সালে ৭৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। ফলে এই দুই বছর তাকে তেমন কোনো আয়কর দিতে হয়নি। হাজার হাজার পাতার এসব নথিতে ট্রাম্পের আয়ব্যয়ের সকল হিসেবই উল্লেখিত আছে। এ নিয়ে তদন্ত করা ‘জয়েন্ট কমিটি অন ট্যাক্সেশন’ জানিয়েছে, ট্রাম্পের কর ফেরত নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন জাগ্রত হয়েছে।
ট্রাম্পের হিসেবে ২০১৭ সালে তার কোম্পানি ডিজেটি এরোস্পেস এলএলসি ৪২ হাজার ৯৬৫ ডলার খরচ করেছে। অপরদিকে ওই বছর এই কোম্পানির আয়ও হয়েছে ৪২ হাজার ৯৬৫ ডলার। ফলে ওই কোম্পানির মোট লাভ দেখানো হয়েছে শূন্য ডলার। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে কোনো কর দিতে হয়নি তাকে। এমন সংখ্যাগুলো নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আয় ও ব্যয় একেবারে সমান হওয়া কতখানি সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
নথিতে দেখা গেছে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিদেশে একাধিক ব্যাংক একাউন্ট ছিল ট্রাম্পের। এরমধ্যে চীনের ব্যাংকেও একাউন্ট ছিল তার। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফাইনান্সিয়াল ক্রাইমস এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর কাছে তার এসব একাউন্টের তথ্য দেয়ার কথা ছিল। চীন ছাড়াও ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডেও ব্যাংক একাউন্ট ছিল ট্রাম্পের। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট একাধিকবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চীনের ‘পুতুল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যদিও বাইডেনের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নে চীনের সঙ্গে তার কোনো ব্যবসার তথ্য নেই।
প্রকাশিত নথিতে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম বছর ২০১৭ সালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের থেকে বিদেশে বেশি কর দিয়েছেন। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৭৫০ ডলার ট্যাক্স দেন তিনি। অথচ বিদেশে পরিশোধ করা ট্রাম্পের ট্যাক্সের পরিমাণ এক মিলিয়ন ডলারের বেশি। বিশ্বজুড়ে ভারত, কাতার, পানামা, আজারবাইজান, দক্ষিণ কোরিয়া, বৃটেন, চীন, ডমিনিক্যান রিপাবলিক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিপাইন, গ্রেনাডা, পুয়ের্তো রিকো, জর্জিয়া, ইসরাইল, ব্রাজিল, সিন্ট মার্টিন, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক এবং সেইন্ট ভিনসেন্টে ব্যবসা রয়েছে ট্রাম্পের।
শুক্রবার কর নথি প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প শিবির হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিভেদ আরও বাড়বে। ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, ডেমোক্রেটদের কখনো এটি করা উচিত ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের এটি কখনই অনুমোদন করা উচিত ছিল না। এটি বহু মানুষের জন্য ভয়াবহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। তবে ডেমোক্রেটরা বলছে, এই কর নথি প্রকাশ করাটা অপরিহার্য ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কর নথি প্রকাশের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তবে দশকের পর দশক ধরে প্রেসিডেন্টরা স্বেচ্ছায়ই তাদের কর নথি প্রকাশ করে আসছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর নথি প্রকাশ না করে বরং তা আড়ালে রাখতেই লড়াই করে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪ বছরের মধ্যে ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি কর নথি প্রকাশ করেননি। রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্প ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। এরপর ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি পরাজিত হন। সম্প্রতি ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী দৌড়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।